Or
Or
অনির্বাণ কোমায় আচ্ছন্ন
প্রত্যুষ আফসোস করেছিল
বলেছিল – কোনো এক অজ্ঞাত পিরামিডের কফিনে
শুধু হৃদপিণ্ডটুকু জ্যান্ত মমির মতো
…………………… আজও বেঁচে আছে ।
আমি সোল্লাসে চিৎকার করে বলেছিলাম
শাবাশ – …. অনির্বাণ শাবাশ |
অনির্বাণ কোমায় আচ্ছন্ন –
মৃত্যুর প্রহর গুনছে ।
কিন্তু …………….
অনেক রাত্রি আত্মস্থ হতে চেয়েছিল অনির্বাণ ।
নিটোল সংজ্ঞাহীন সমাধি ।
সৃষ্টির উন্মত্ত সুখ, উষ্ণ আলিঙ্গন
আর চেয়েছিল নীল আবিরের মত সমুদ্র
মিশরের বুকে আর এক নীল কবিতা লিখবে সে ।
অনির্বাণ চেয়েছিল কিছু সবুজ আফ্রিকা থেকে কুড়িয়ে
সাহারার ধুসর খোঁপায় পরিয়ে দিতে
…………………… পারে নি ।
সময় তার কাছে কোন রাজপথ নয় ।।
সামান্য ভাঙা চোরা সঙ্কীর্ণ গলিপথ ।।
তাই সে ক্লান্ত প্রতীক্ষায় শুধু প্রহর গুনছে ।।
অনির্বাণ মৃত্যুর প্রহর গুনছে
তাই …………….
এখন অন্যখাতে হিসাব মেলাতে ব্যস্ত ।
কালি ঝুলি আর পোড়া ফ্যান মাখা হাঁড়িটা –
আর শিশু হাতে তুলে আনা গুটি কয় ভাতের কণা …….
আমরা আগলে নিয়ে বসে আছি
বছর থেকে আলোকবর্ষ ধরে
…………………… অনির্বাণ ফিরে আসবে ।।
আজ আমি দেখতে পাচ্ছি
সময় অনির্বাণের কপালে চুমু দিয়ে বসে আছে ……
বসে আছে আর নিষ্প্রাণ আঙুলগুলো
অন্যমনস্কভাবে গুনে যাচ্ছে –
এক দুই …………………… দশ ।
আসলে দশটা আঙুল দিয়ে অনেক সংখ্যা হয় ।
…………………… শাবাশ অনির্বাণ শাবাশ ।।
Or
কালের নিয়মে চলে যায় সব – ।।
চলে যায় সব পথ চলা –
চলে যায় যত পুরানো
যত চেনা ম্যাড়মেড়ে একঘেয়ে জীবন ।
এই – দিন – ক্ষণ – মান – ঢেউ – যৌবন –
তুমি- আমি – সময় ।।
চলে যায় –
কালের নিয়মে চলে যায় সব ।।
এই চলে যাওয়া সিঁদুরে মেঘ –
ওড়নার মতো
ভালোলাগা ছেড়ে গহন অরণ্য –
এই ফেলে যাওয়া –
নায়াগ্রার মতো
অবিরাম অবিরাম –
অথবা ব্যারেনের নাভীর মতো শোকার্ত ।।
তবু এক ছবি –
চলে যাওয়ার স্রোতে মাথা রেখে –
ঝিমধরা শরীরী অঘ্রান –
স্তব্ধ রাফ্ফ্লেসিয়া –
তুমি – আমি – শ্রাবণ ।।
Or
ভাবি ……
তোমায় আর আঁকব’ না
বর্ণে ছন্দে এভাবে আর ডাকব না
ভাবব না আর ……
তোমায় আমি ভাবব না ।।
নিশিথ শেষে পরীর মতো
জানি কখনো আসবে না
দিলাম ছুটি
তোমায় আমি
ডাকব না ……
আর কখনো ডাকব না ।।
কখনো যদি দু চোখ জুড়ে
ভিজিয়ে পাতা এমনি করে
আমার মতো তুমিও কাঁদো ।।
নাই বা দিলে আমায় তুমি
সেই দু ফোঁটা অশ্রু বিন্দু,
জানব তুমি আমারি ছিলে
সেই স্মৃতিরই নরম কোলে
ঘুমাও সোনা – আর কেঁদো না ||
আমি ওগো ফিরব না ……
আর কখনো ফিরব না ।।
Or
নরম সন্ধ্যার লাজুক গালে আলতো চুমু
কাশফুল ছিঁড়ে দেওয়া মৃদু শৃঙ্গার
আর…..
বৃষ্টির বলি রেখার বিনুনি ৷
সন্ধ্যা লজ্জায় সবুজ হয়ে ওঠে ৷
সে সন্ধ্যা তখন গলতে সুরু করেছে,
আর একটু পরে –
মিশে যাবে রাত্রির উষ্ণ শরীরে ৷
রাত্রির শরীর থেকে যাবে বীজ হয়ে
দিনের অন্তরে ৷৷
কাল সে বীজ জন্ম দেবে
আর এক নতুন সন্ধ্যার ….
ঠিক আজ যখন সন্ধ্যা নামে ৷
সন্ধ্যা নামে দিন শেষ হয় বলে
সন্ধ্যা নামে রাত শুরু হয় বলে
সব কাজ শেষ হলে সন্ধ্যা নামে৷
এখন শুধু দুরন্ত রাত্রির অবসর
সব ভুলে থাকা ৷
ভয় হয় ……..
আমার সন্ধ্যা কোনো দিন হয়তো
ভুলে যাবে আমায় নিতে,
আমার গ্রাম – আমার শহর –
ভুলে যাবে ৷
হয়তো কোনো সন্ধ্যা ভুলে যাবে আমায় ……..
Or
আজ বড় মেঘ জমেছে
আমার গ্লাসের গলা বেয়ে
লাল ওয়াইনের স্তর –
লাল ওয়াইনের মেঘ – ঢলে আসে ৷
….. আজ বড় মেঘ জমেছে ৷৷
আজ সারাটা দিন শুধু তুষারের মতো সাদা –
নরম ঘাসের মতো পেলব –
ওয়াইনের ঢল নেমেছে ৷৷
আজ বড় ভোর জমেছে
ভিজে শিশিরের চিক্কন জালি
পাতায় পাতায় সবুজের গন্ধ
আড় ভাঙা সূর্যের হাই
আর পদ্মের লাজুক চাহনি ৷
আজ বড় ভোর জমেছ ৷৷
Or
কথা ছিল কাল সারারাত
এক মাতাল করা ঝোড়ো জ্যোৎস্না
আমার কড়িকাঠ বেয়ে নেমে আসা
ঈষৎ পান্ডুর মেঘ ঝরা সন্ধ্যা
…….আর সেই কোন ছেলেবেলার ভেসে আসা
কত শত মুখ দেউড়ির খিড়কি দিয়ে
অনেক মুখের থেকে মুখ ধার করে –
ভোরের আলোয় লাল হয়ে যাবে ৷
অনেক মুখের থেকে মুখ
ঠিক মানুষের মুখের মত মুখ –
রাত্রির শরীরে মুখ লুকিয়ে অনেক কেঁদেছি আমি ৷৷
অনেক রাত অবধি শুধু শীতল হাওয়া
শিরশিরে ঠান্ডা হাওয়া….
অনেক কেঁদেছি আমি
তারপর….
ঘুমিয়ে গেছি কখন ৷৷
অদ্ভুত সুন্দর এক ভোর, রমণীর মুখের মত
কখন সে ঠান্ডা বাতাস হয়ে গেছে বসন্ত….. ৷৷
তোমার লাল ফোঁটার মত ভোরে –
আমি আজও খুঁজে ফিরি ……
অনেক মুখের থেকে মুখ
ঠিক মানুষের মুখের মত মুখ ৷৷
Or
এক ছটাক মদ নিয়ে
মাতলামির অন্ত নেই আমার…..
ভাবি কয়েক হাজার বছর ধরে
একতাল কাদা, বার্নিশ
হাতে মুখে ঠোঁটে ঘষে
অবশেষে পাথুরে প্রতিমা ,
….. এটাই সত্যি ৷
নায়েগ্রার মুখের মতো ধোঁয়াশা,
হিমালয়ের বুকের মতো – বিচূর্ণ
অথবা ব্যারেনের অগ্নিগর্ভ
হৃদয় থেকে তুলে আনা
একতাল উত্তপ্ত লাভা ৷
আমি নাভিতে যোনিতে চুমু দিয়ে দেখি
রাত শেষ হয়ে গেছে –
ভোরের ঝিমুনিটুকু বাকি ৷
সকালে চোখ ঘষে বুঝি
নিজের সত্তা নিয়েই
ধৃষ্টতার অন্ত নেই আমার ৷
Or